ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

সিইসির সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত প্রতিনিধি দলের বৈঠক

সিইসির সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। বুধবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে উভয় দলের নেতাদের এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপি নেতারা অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়কার সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি জানান। তাদের ভাষ্য, দলীয়ভাবে তারা এ বৈঠকে আসেননি। জামায়াত নেতারা দাবি করেন,  স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তাহলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এ প্রসঙ্গে দলটির মত হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে দলীয় প্রার্থীদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মেয়র বানাতে দলীয় প্রভাব কাজে লাগানো হয়। এতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে না।  বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়কার সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি জানান কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বিএনপির কয়েকজন নেতাসহ বিভিন্ন আসনের প্রতিনিধি দল। সিইসির সঙ্গে এ বৈঠক শেষে কুমিল্লার প্রতিনিধি বিএনপির সাবেক এমপি উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘১৯৮৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনী আসন ছিল, আপনারা সেভাবে পুনর্বহাল করেন- এটা আমাদের সার্বজনীন দাবি। আমরা কমিশনের কাছে খসড়া তালিকা প্রকাশের জন্য আবেদন করেছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, তারা কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের আশা পূরণ হবে।’ ইসির সঙ্গে এ বৈঠকটি বিএনপির পক্ষ থেকে নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিনিধিরা এসেছি। আমাদের সবার দাবি হচ্ছে ২০০১ সালের সীমানা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করা।’ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘২০০১ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেভাবে আমরা আসনভিত্তিক নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলাম, এবারও ঠিক সেভাবে এলাকাভিত্তিক আসনগুলো যেন পুনর্বিন্যাস করা হয়। এ ব্যাপারে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার, সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আশ্বস্ত করেছেন অনৈতিকভাবে আসন বণ্টন হবে না, জনগণের চাহিদা মোতাবেক আসন বিন্যাস করে উপহার দেবে।’ বিএনপির এক নেতা মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধি হিসেবে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন পুনর্বিন্যাস করলে এ নির্বাচন কমিশনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।’ এর আগে, হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনটি আগের মতোই রাখার দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে একদল লোক। মানববন্ধনের আগত ৬নং নিলখী ইউনিয়ন পরিষদ যুবদলের আহ্বায়ক রাসেল মাহমুদ জানান, ১৯৫৪ সাল থেকে হোমনা-মেঘনা এক আসনেই ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এটি আলাদা করে। ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত সেভাবেই ভোট হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা-২ আসনটি ফের আগের মতো করা হয়। যুবদলের এই নেতা বলেন, ‘অর্থাৎ হোমনা-মেঘনাবাসী পুনরায় এক আসনে চলে আসে। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই আবার ২০০৮ সালের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। তাই আমরা সেটা যাতে না করা হয় সে জন্য এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কুমিল্লা-২ আসনে হোমনা-মেঘনা বহাল রাখার আবেদন করেছি।’ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ২০০৮-২০২৩ সালের সীমানা নির্ধারণে বিতর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেছে। সংস্কার কমিশন বলেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করা হয় ২০০৮ সালে। এ সময় জাতিসংঘের সহায়তায় একজন আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিয়ে একটি গবেষণা করা হয়, যদিও ওই গবেষণার সকল পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সীমানা সংক্রান্ত সংশোধিত আইন হাতে পাওয়ার পর কাজ শুরু করেছে। এখন এ কাজ প্রায় শেষের দিকে। যেখানে। ৭৫টি আসনের ছয় শতাধিক আবেদনও জমা পড়েছে। সংসদীয় এলাকার জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত না পাওয়ায় আমাদের সিটি নিতে দেরি হচ্ছে।  এদিকে গত (১৯ জুন) ইসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত এখনো বাকি থাকায় আলোচনাটা আজ আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে।’ জানা যায়, ১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ মোটামুটি একই পদ্ধতিতে হয়। ২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যার ঘনত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো জেলার আসনসংখ্যা দুটির কম হবে না, পার্বত্য তিন জেলায় একটি করে এবং ও ক্ষুদ্র জেলা মেহেরপুরে দুইটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়। ঢাকায় ১৩টি থেকে আসন হয় ২০টি। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। দুই বছরের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যাপক সংস্কার আনা হয় নির্বাচনী সব আইনে। এ ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক ॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা ইসি পুনর্গঠন চাইনি। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের পর নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, সেহেতু এই কমিশনের আস্থার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তারা এখনো প্র্যাকটিক্যালি কাজ শুরু করেনি। অতীতের মতো দলীয় সরকারের অধীনে তো এই কমিশনের নিয়োগ হয়নি, এই সরকারের আমলেই নিয়োগ হয়েছে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াত নেতা ও বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য বলেছি। নির্বাচনকালীন একটি তত্ত্বাবধায়ক, অন্তর্বর্তী সরকার যেটিই হোক, সেটা হবে। এর অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভালো হবে। দলীয়ভাবে ভোট হলে দলের সরকার তার প্রার্থী জয়ী করে নেয়। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, নিবন্ধন ও প্রতীকের গেজেট প্রকাশ করে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করেছে ইসি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বেআইনিভাবে নিবন্ধন বাতিল ও প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। চরম অন্যায় করেছিল। কমিশন গেজেট করায় যে প্রত্যাশায় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তার পূরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ভোটে পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পদ্ধতি চাই। ঐকমত্য কমিশনেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা এটার দাবি জানিয়েছি। পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে সুষ্ঠু ভোট হয় না, তা অতীতে দেখেছি। পিআর পদ্ধতিতে নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হয়। আমরা এক শতাংশ ভোটের হারে আসন বণ্টনের কথা বলেছি। ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে। ভোট দিতে পারে না। প্রবাসীরা যেভাবে বাংলাদেশকে বিদেশে উপস্থাপন করেন, রেমিটেন্স পাঠায় তার চেয়ে বড় কথা তাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন বলেছে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তারা উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, সংস্কার হবে তা যেন কাগজে না হয়। নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। আশা করি আগামীতে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যশা পূরণ হবে। যে দাবিগুলোর কথা বললাম তা ইসি রিলেটেড। ঐকমত্য কমিশনের পাশাপাশি ইসিকেও জানালাম।

আজ অধ্যাদেশ নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে চান অর্থ উপদেষ্টা

আজ অধ্যাদেশ নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে চান অর্থ উপদেষ্টা

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ নিয়ে বিসিএস কর ও কাস্টমস- এক্সাইজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই আলোচনার মাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।  অন্যদিকে, অর্থ উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিলেন না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা যাচ্ছে না। ফলে তিন ধরে চলমান কলমবিরতি কর্মসূচির অচলাবস্থার অবসান হলো না।  অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার প্রত্যাশা করে, এই আলোচনার মাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে। এনবিআরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যার যার দপ্তরে অবস্থান করে অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসগুলোয় রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার জন্য অর্থ উপদেষ্টা অনুরোধ করছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঘণ্টাব্যাপী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজস্ব সংস্কার কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সম্ভাবনা ও শঙ্কায় টালমাটাল পাঁচ ইসলামী ব্যাংক

সম্ভাবনা ও শঙ্কায় টালমাটাল পাঁচ ইসলামী ব্যাংক

দেশের আর্থিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে এবং দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তেমনি দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা ও বিতর্ক। পাঁচটি ব্যাংকের মোট আমানত ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা হলেও এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ-যা প্রায় ৭৭ শতাংশ। সমন্বিতভাবে এই ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। কিন্তু মূলধন ঘাটতির অঙ্ক বিশাল। এত বিপুল খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির মধ্যেও গ্রাহক সংখ্যা ৯২ লাখ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬ হাজার। এই বিপুল জনবল ও গ্রাহকগোষ্ঠী মার্জার পরবর্তী সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের দ্বিধা ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগে একদিকে তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠনের সম্ভাবনা, অন্যদিকে গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অনেক গ্রাহক আমানতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, আবার দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মীরা আশঙ্কায় রয়েছেন চাকরি হারানোর। কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যেই আমানত হারাতে শুরু করেছে। এক্সিম ব্যাংকের আপত্তি ও বাস্তবতা মার্জারের বিরোধিতায় সরব হয়েছে এক্সিম ব্যাংক। তাদের দাবি, তারা একটি স্বনির্ভর, শক্তিশালী ব্যাংক এবং অন্য কোনো দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হওয়া তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) বলছে ভিন্ন কথা। এক্সিম ব্যাংকের ৫২ হাজার ৭৬ কোটি টাকার বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ২৫ হাজার ১০১ কোটি টাকাই খেলাপি, যা মোট ঋণের ৪৮.২০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আইএমএফের চাপ ও আন্তর্জাতিক নিয়ম ॥ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ অতিক্রম করলে সেটিকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করা হয়; যাকে হয় দ্রুত বিলুপ্ত করতে হবে, নয়ত পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। পাঁচটি ব্যাংকই এই সীমা অতিক্রম করেছে। তাই আইএমএফের চাপেই হোক বা আর্থিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই হোক, বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণ সিদ্ধান্তকে অনেকেই সময়োপযোগী মনে করছেন। গভর্নরের আশ্বাসে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এই মার্জার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং কয়েক মাসের মধ্যেই এটি বাস্তবায়ন হবে।” তিনি আরও বলেন, “এই মার্জারে কারও চাকরি যাবে না। অতিরিক্ত শাখাগুলো শুধু শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর করা হতে পারে।” বিশ্লেষকের মত ব্যাংক খাতের একজন বিশ্লেষক বলেন, “এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটি বড় ব্যাংক তৈরি হবে। শাখা, কর্মকর্তা, গ্রাহক ও সম্পদের পরিমাণ একত্রে বিশাল হবে। দুর্বল অ্যাসেটগুলো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনায় আনা হবে। প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি পূরণেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” সম্ভাব্য সুফল একীভূত ব্যাংকে ৭৭৯টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০টি এজেন্ট আউটলেট এবং ১,০০০টির বেশি এটিএম বুথ নিয়ে গড়ে উঠবে দেশের বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংক ব্যাংকিং সেবার আওতা বাড়িয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারবে। মার্জারের ফলে খরচ কমবে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে এবং দক্ষ মানবসম্পদের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। সার্বিকভাবে, ব্যাংক মার্জার দেশের ব্যাংকিং খাতে কার্যকারিতা, স্থিতিশীলতা এবং আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে বলে মত দিয়েছেন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ- একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এক্সিম ব্যাংকের আমানত ৪২৯৯৩ কোটি টাকা, বিতরণকৃত ঋণ ৫১৬৪২ কোটি, খেলাপি ঋণ ২৫১০১ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ১৪৪৮ কোটি, শাখা ১৫৫টি এবং লোকসান ৪০৯ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আমানত ৩০৯৭৭ কোটি টাকা, বিতরণকৃত ঋণ ৩৫২২০ কোটি, খেলাপি ঋণ ২৩৫৭৫ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ১১৪০ কোটি, শাখা ১৮১টি এবং লোকসান ৫৩ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আমানত ১২৩১৩ কোটি টাকা, বিতরণকৃত ঋণ ১৪৪২৭ কোটি, খেলাপি ঋণ ১৩৫৬৯ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ৯৮৭ কোটি, শাখা ১০৪টি এবং লোকসান ২১৪ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানত ১৭৯৪২ কোটি টাকা, বিতরণকৃত ঋণ ২৮২৭৯ কোটি, খেলাপি ঋণ ২৬৪৯১ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ১০৩৬ কোটি, শাখা ১১৪টি এবং লোকসান ৮০ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আমানত ৪৩১৪৩ কোটি টাকা, বিতরণকৃত ঋণ ৬০৯১৫ কোটি, খেলাপি ঋণ ৫৮১৮২ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ১২০৮ কোটি, শাখা ২০৬টি এবং লোকসান ৪০৫ কোটি টাকা।